৯০ দশকের আমরা,  চিন্তা ও দর্শন

ফেসবুক নয়, মাঠেই আমাদের শৈশব ছিল – আজকের ভার্চুয়াল জীবনের ভয়াবহতা

ভূমিকা:

একটা সময় ছিল, বিকেলের পর পাড়া কাঁপিয়ে খেলাধুলা করতাম। সন্ধ্যার আলোয় লুকিয়ে গল্প হতো, কারও ছাদে বা কারও বারান্দায়। এখন সেই জায়গায় শুধুই নীল স্ক্রিন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর TikTok। আজকালকার ছেলেমেয়েরা জানেই না “আব্বু ডাকছেন” এই একটা শব্দে কত দ্রুত পা চলতো বাসার দিকে।

আজকের প্রজন্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভয়াবহ আসক্তি:

সোশ্যাল মিডিয়া শুরু হয়েছিল যোগাযোগ সহজ করতে। কিন্তু আজ তা হয়ে গেছে একটা ভার্চুয়াল মাদক
আজকের অনেক ছেলে-মেয়ে—

  • দিন শুরু করে ফোন স্ক্রল করে
  • খাওয়ার আগে ছবি তোলে
  • ভালোবাসা মাপে রিয়েলশনের স্টোরিতে কে রিয়্যাক্ট করলো সেটা দেখে
  • মন খারাপ হলে কারো কাছে না গিয়ে “স্যাড মিউজিক” চালিয়ে ক্যামেরার সামনে কাঁদে

কষ্ট বা আবেগ এখন আর মনের বিষয় নয়, ক্যামেরার বিষয়।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটা হলো—
এইসব ‘ভিউস’ আর ‘লাইক’ এর পেছনে ছুটতে গিয়ে তারা ভুলে যাচ্ছে:

  • বাস্তব সম্পর্ক
  • পরিবার
  • নিজের ভিতরের আনন্দ

আজকের অনেক কিশোর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, আত্মহত্যার হার বেড়েছে, আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, কারণ সোশ্যাল মিডিয়া তাদের ‘নিজেকে’ নয়, ‘নিজেকে দেখাতে’ শেখাচ্ছে।

আমরা যারা ৯০ এর দশকে বড় হয়েছি – আমাদের শৈশবটা কেমন ছিল?

আমাদের জীবনে ছিলো না স্মার্টফোন, ছিলো সাদামাটা এক জগৎ।
কিন্তু কী অসাধারণ সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো:

  • বিকেল মানেই মাঠে যাওয়া, ডাংগুলি, কানামাছি, বরফ-জল
  • হাতের লেখা সুন্দর করতে গিয়ে এক পাতায় এক শব্দ লিখতাম
  • ছুটির দিনে ঘুড়ি ওড়ানো, নৌকা ভ্রমণ, গলির মোড়ে আইসক্রিম
  • কার্টুন দেখতাম ছাদে অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে—জানিনা কি আনন্দ ছিল সেখানে
  • কেউ মন খারাপ করলে পাশে গিয়ে বসতাম, জড়িয়ে ধরতাম

আমরা জানতাম—

  • বন্ধু মানে পাশে থাকা
  • ভালোবাসা মানে চোখে চোখ রাখা
  • খুশি মানে নিজে খেলে আনন্দ পাওয়া—not just filming it

স্মার্টফোন যখন ‘শিশুর খেলনা’ হয়ে যায়

আজকাল দেখা যায়, দুই-তিন বছরের বাচ্চাও ট্যাব না পেলে খায় না। মা-বাবারা ভাবছেন, “ও তো অনেক শান্ত থাকে স্ক্রিনে কিছু দিলে।”
কিন্তু একটু থামুন… ভাবুন—

এই শিশুদের মস্তিষ্ক আজ স্ক্রিন-নির্ভর আনন্দে বেড়ে উঠছে। মাঠ নেই, বাস্তব নেই।
তাদের শৈশব কোথায়?

একটা চিঠি – ভবিষ্যতের প্রজন্মকে

“প্রিয় আগামী প্রজন্ম,
আমরা তোমাদের জন্য একসময় এমন একটা পৃথিবী রেখে যাব, যেখানে স্ক্রিন থাকবে কিন্তু চোখে চোখ রাখা থাকবে না।
থাকবে হাজার হাজার ফলোয়ার, কিন্তু সত্যিকারের একটাও বন্ধু থাকবে না।
এই লেখাটা যদি কোনোভাবে তোমার মনে পৌঁছায়, তাহলে শুধু বলবো—ফোনের বাইরে আসো। প্রকৃতিতে ফিরে যাও, মানুষকে অনুভব করো, ছুঁয়ে দেখো জীবনের আসল রূপ।”

একটা ব্যক্তিগত কষ্ট – যেটা আমি আজও ভুলিনি

আমি আজও মনে করতে পারি, একজন বন্ধু মরে যাবার পর তার ছবি দিয়ে কেউ ফেসবুকে কনটেন্ট বানিয়েছিলো।
লাইক, কমেন্ট, শেয়ার… যেন তার মৃত্যু একটা “ট্রেন্ডিং পোস্ট”।

আমার মন চিৎকার করে উঠেছিলো।

আমরা কোথায় যাচ্ছি?
কেন এই অমানবিকতা আমাদের ধরছে?

উপসংহার:

সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়।
আমরা চাই সচেতন ব্যবহার
যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল জগৎ গড়লেও বাস্তব জগৎকে ভুলে না যায়।
যেখানে আমরা স্মৃতি ক্যামেরায় নয়, মনে রাখি
যেখানে শৈশব হয় পায়ের ধুলায়, আকাশের নিচে—not under WiFi signals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *